বিভিন্ন প্যারেন্টিং স্টাইল: হেলিকপ্টার থেকে ফ্রি-রেঞ্জ পর্যন্ত

শিশুরা পৃথিবীতে আসার পর থেকেই তাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে এবং তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা অর্জনে সাহায্য করার জন্য অভিভাবকদের ভূমিকা অপরিহার্য। প্যারেন্টিং স্টাইল বা সন্তান লালন-পালনের ধরনগুলির মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে এবং প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। বর্তমান সময়ে, আমরা প্রায়ই “হেলিকপ্টার”, “টাইগার”, “স্নোপ্লো”, “ফ্রি-রেঞ্জ” এবং “লনমাওয়ার” প্যারেন্টিং স্টাইল সম্পর্কে শুনি, যা বিভিন্ন ধরনের অভিভাবকদের এবং তাদের সন্তানদের সাথে তাদের সম্পর্কের ধরনকে বোঝায়। এই ব্লগে, আমরা বিভিন্ন প্যারেন্টিং স্টাইল সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো, প্রতিটি স্টাইলের বৈশিষ্ট্য, ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরবো। আপনি যদি একজন অভিভাবক হন এবং আপনার সন্তানদের সঠিকভাবে লালন-পালন করতে চান, তবে এই ব্লগটি আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন প্যারেন্টিং স্টাইল আপনার সন্তানের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এবং কীভাবে আপনি তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সাহায্য করতে পারেন। আসুন তাহলে শুরু করি এবং জানি কীভাবে প্যারেন্টিং স্টাইলগুলি আমাদের শিশুদের জীবনে প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে আমরা তাদের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করতে পারি।

হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং কি?

হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং হল একটি প্যারেন্টিং স্টাইল যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি অতিরিক্ত নজরদারি করেন এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেন। এই ধরনের অভিভাবকরা প্রায়ই সন্তানের সব কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখেন এবং তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হন।

হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং এর বৈশিষ্ট্য

  • সন্তানের প্রতিটি কাজের উপর ঘনিষ্ঠ নজরদারি
  • সন্তানের সব সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা
  • সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত সাবধানতা
  • সন্তানের একাডেমিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ

হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং এর ইতিবাচক দিক

  1. নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: হেলিকপ্টার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকেন। তারা সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপে সাহায্য করেন যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
  2. উচ্চ সাফল্যের সম্ভাবনা: এই ধরনের প্যারেন্টিং স্টাইলে অভিভাবকরা সন্তানের একাডেমিক এবং অন্যান্য সাফল্যের জন্য অত্যন্ত যত্নবান হন। ফলে সন্তানরা অনেক সময় উচ্চ মানের একাডেমিক ফলাফল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং এর নেতিবাচক দিক

  1. স্বাধীনতা হ্রাস: হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের কারণে সন্তানরা অনেক সময় স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এবং নিজের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয় না। তারা সর্বদা অভিভাবকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
  2. আত্মবিশ্বাসের অভাব: এই ধরনের প্যারেন্টিংয়ের ফলে সন্তানের আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে, কারণ তারা সব সময় অভিভাবকদের সাহায্য প্রত্যাশা করে এবং নিজের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করে।

হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং এমন এক ধরনের পদ্ধতি যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীরভাবে জড়িত থাকেন। যদিও এই ধরনের প্যারেন্টিংয়ের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবে এর নেতিবাচক প্রভাবগুলি দীর্ঘমেয়াদে সন্তানের স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে। অভিভাবকদের উচিত এই বিষয়টি বিবেচনা করা এবং সন্তানের উন্নতির জন্য সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা।

টাইগার প্যারেন্টিং কি?

টাইগার প্যারেন্টিং হল একটি প্যারেন্টিং স্টাইল যেখানে অভিভাবকরা সন্তানের উপর উচ্চ মানের একাডেমিক এবং অন্যান্য সফলতার জন্য কঠোর শৃঙ্খলা আরোপ করেন। এই ধরনের প্যারেন্টিং এ অভিভাবকরা সন্তানের প্রতি অত্যন্ত উচ্চ প্রত্যাশা রাখেন এবং সন্তানের কঠোর পরিশ্রম ও সাফল্যের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।

টাইগার প্যারেন্টিং এর বৈশিষ্ট্য

  • উচ্চ প্রত্যাশা এবং মানদণ্ড স্থাপন
  • কঠোর শৃঙ্খলা এবং নিয়মাবলী
  • সন্তানের একাডেমিক ও অন্যান্য কার্যকলাপে কঠোর নিয়ন্ত্রণ
  • সন্তানের সফলতার জন্য প্রচুর পরিশ্রম এবং সময়ের বিনিয়োগ

টাইগার প্যারেন্টিং এর ইতিবাচক দিক

  1. উচ্চ আকাঙ্ক্ষা: টাইগার অভিভাবকরা সন্তানের জীবনে উচ্চ প্রত্যাশা এবং আকাঙ্ক্ষা স্থাপন করেন। এটি সন্তানের মধ্যে উচ্চ লক্ষ্য স্থাপন এবং তা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যম ও পরিশ্রম তৈরি করতে সাহায্য করে।
  2. কঠোর পরিশ্রমের অভ্যাস: এই ধরনের প্যারেন্টিং স্টাইলে সন্তানরা কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং জীবনে সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে তা শিখে যায়।

টাইগার প্যারেন্টিং এর নেতিবাচক দিক

  1. অতিরিক্ত চাপ: টাইগার প্যারেন্টিংয়ের কারণে সন্তানদের উপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাদের সবসময় অভিভাবকদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, যা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
  2. মানসিক চাপ: উচ্চ প্রত্যাশা এবং কঠোর শৃঙ্খলার কারণে সন্তানরা প্রায়ই মানসিক চাপ অনুভব করে। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের মধ্যে অতিরিক্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।

টাইগার প্যারেন্টিং একটি কঠোর প্যারেন্টিং স্টাইল যা সন্তানের উচ্চ সাফল্যের জন্য অত্যন্ত উচ্চ প্রত্যাশা এবং কঠোর শৃঙ্খলা স্থাপন করে। যদিও এই পদ্ধতির কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন কঠোর পরিশ্রম এবং উচ্চ আকাঙ্ক্ষা, তবে এর নেতিবাচক প্রভাবগুলি সন্তানের মানসিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়তে পারে। অভিভাবকদের উচিত সন্তানের উপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে তাদের সমর্থন করা এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার দিকে মনোযোগ দেওয়া।

স্নোপ্লো প্যারেন্টিং কি?

স্নোপ্লো প্যারেন্টিং হল এমন একটি প্যারেন্টিং স্টাইল যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের সামনে থেকে সব বাধা দূর করে দেন যাতে তাদের সন্তানদের কোনো কষ্ট বা সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয়। এই ধরনের অভিভাবকরা সন্তানের পথের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলে তাদের জন্য একটি মসৃণ এবং সহজ জীবন তৈরি করতে চান।

স্নোপ্লো প্যারেন্টিং এর বৈশিষ্ট্য

  • সন্তানের সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করা
  • সন্তানের সামনে থেকে সব বাধা দূর করা
  • সন্তানের জন্য সহজ এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা
  • সন্তানের স্বাচ্ছন্দ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা

স্নোপ্লো প্যারেন্টিং এর ইতিবাচক দিক

  1. মসৃণ জীবন: স্নোপ্লো প্যারেন্টিং এর মাধ্যমে সন্তানের জীবনকে সহজ এবং মসৃণ করা যায়। তারা কোনো বড় সমস্যার সম্মুখীন না হয়ে সুষ্ঠুভাবে তাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায় পার করতে পারে।
  2. স্বস্তি: এই ধরনের প্যারেন্টিং এ সন্তানের জীবনে খুব কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যা তাদের মানসিক স্বস্তি বৃদ্ধি করে। তারা সবসময় অভিভাবকদের কাছ থেকে সুরক্ষা এবং সহায়তা পায়।

স্নোপ্লো প্যারেন্টিং এর নেতিবাচক দিক

  1. সমস্যা সমাধানের অভাব: স্নোপ্লো প্যারেন্টিং এর কারণে সন্তানরা নিজেরা সমস্যার সমাধান করার অভ্যাস তৈরি করতে পারে না। তারা সবসময় অভিভাবকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং নিজেরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে কীভাবে তা সমাধান করবে তা জানে না।
  2. বাস্তব জীবনের প্রস্তুতির অভাব: এই ধরনের প্যারেন্টিং এ সন্তানরা বাস্তব জীবনের কঠিন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে পারে না। তারা যখন বড় হবে এবং নিজের জীবন পরিচালনা করবে, তখন তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে এবং সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে অসুবিধায় পড়তে পারে।

স্নোপ্লো প্যারেন্টিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য একটি মসৃণ এবং নিরাপদ জীবন তৈরি করার চেষ্টা করেন। যদিও এটি সন্তানের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তবে এটি তাদের সমস্যার সমাধানের দক্ষতা এবং বাস্তব জীবনের প্রস্তুতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অভিভাবকদের উচিত সন্তানের উন্নতির জন্য সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং তাদের নিজের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা করা।

ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং কি?

ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং হল একটি প্যারেন্টিং স্টাইল যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্বাধীনতা প্রদান করেন এবং তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেন। এই ধরনের অভিভাবকরা সন্তানের জীবনে কম হস্তক্ষেপ করেন এবং তাদের স্বাধীনভাবে বড় হতে দেন।

ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং এর বৈশিষ্ট্য

  • সন্তানের স্বাধীনতার প্রতি জোর দেওয়া
  • সন্তানের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ প্রদান
  • সন্তানের সমস্যা সমাধানে কম হস্তক্ষেপ
  • সন্তানের আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির চেষ্টা

ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং এর ইতিবাচক দিক

  1. স্বাধীনতা বৃদ্ধি: ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং এ সন্তানরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে এবং নিজের জীবনের দায়িত্ব নিতে শেখে। তারা নিজেদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয় এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে।
  2. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: এই ধরনের প্যারেন্টিং স্টাইলে সন্তানরা নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখে এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে উৎসাহিত হয়। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং ব্যক্তিগত বিকাশে সহায়ক হয়।

ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং এর নেতিবাচক দিক

  1. নিরাপত্তার ঝুঁকি: ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং এ সন্তানদের উপর কম নজরদারি থাকার কারণে তারা কখনো কখনো বিপদে পড়তে পারে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা অতিরিক্ত স্বাধীনতা পায়।
  2. অতিরিক্ত স্বাধীনতা: অনেক সময় অতিরিক্ত স্বাধীনতা সন্তানদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তারা কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং এর ফলে তাদের জীবনে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

ফ্রি-রেঞ্জ প্যারেন্টিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্বাধীনতা প্রদান করেন এবং তাদের নিজেদের জীবনের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করেন। যদিও এটি সন্তানের স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য সহায়ক, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, যেমন নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং অতিরিক্ত স্বাধীনতার সমস্যা। অভিভাবকদের উচিত সন্তানের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক সমর্থন প্রদান করা।

লনমাওয়ার প্যারেন্টিং কি?

লনমাওয়ার প্যারেন্টিং হল এমন একটি প্যারেন্টিং স্টাইল যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের পথের সমস্ত বাধা দূর করে দেন যাতে তাদের সন্তানদের কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয়। এই ধরনের অভিভাবকরা সন্তানের জন্য একটি সহজ এবং সমস্যামুক্ত জীবন নিশ্চিত করতে চান, এবং তারা সন্তানের সামনে থেকে প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে দেন।

লনমাওয়ার প্যারেন্টিং এর বৈশিষ্ট্য

  • সন্তানের জন্য সব বাধা দূর করা
  • সন্তানের জীবনে সমস্যা সমাধানে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ
  • সন্তানের স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুবিধা নিশ্চিত করা
  • সন্তানের জীবনে কোন সমস্যা না থাকুক তা নিশ্চিত করা

লনমাওয়ার প্যারেন্টিং এর ইতিবাচক দিক

  1. সহজ জীবন: লনমাওয়ার প্যারেন্টিং এর মাধ্যমে সন্তানের জীবনকে সহজ এবং সমস্যামুক্ত করা যায়। তারা সহজে এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জীবনের প্রতিটি পর্যায় পার করতে পারে।
  2. সমর্থন: এই ধরনের প্যারেন্টিং এ সন্তানরা সব সময় অভিভাবকদের কাছ থেকে সমর্থন পায়। তারা জানে যে তাদের যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে অভিভাবকরা পাশে থাকবে।

লনমাওয়ার প্যারেন্টিং এর নেতিবাচক দিক

  1. সমস্যা সমাধানের অভাব: লনমাওয়ার প্যারেন্টিং এর কারণে সন্তানরা নিজেরা সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা তৈরি করতে পারে না। তারা সব সময় অভিভাবকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং নিজেরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে কীভাবে তা সমাধান করবে তা জানে না।
  2. অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা: এই ধরনের প্যারেন্টিং এ সন্তানরা অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তারা নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাহায্য প্রত্যাশা করে এবং নিজেরা স্বাধীনভাবে কিছু করতে সংকোচ বোধ করে।

লনমাওয়ার প্যারেন্টিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের জন্য একটি সহজ এবং সমস্যামুক্ত জীবন তৈরি করার চেষ্টা করেন। যদিও এটি সন্তানের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য এবং সমর্থন নিশ্চিত করে, তবে এটি তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং স্বাধীনতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অভিভাবকদের উচিত সন্তানের উন্নতির জন্য সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং তাদের নিজের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা করা।

বিভিন্ন প্যারেন্টিং স্টাইলের মধ্যে হেলিকপ্টার, টাইগার, স্নোপ্লো, ফ্রি-রেঞ্জ এবং লনমাওয়ার প্যারেন্টিং তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব নিয়ে আসে। প্রতিটি প্যারেন্টিং স্টাইলের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উচ্চ সাফল্যের সম্ভাবনা, স্বাধীনতার বৃদ্ধি এবং আত্মবিশ্বাসের উন্নতি। তবে, এসব প্যারেন্টিং স্টাইলের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, যেমন অতিরিক্ত চাপ, স্বাধীনতার অভাব, সমস্যা সমাধানের দক্ষতার ঘাটতি এবং অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা।

সঠিক প্যারেন্টিং স্টাইল নির্বাচনের জন্য অভিভাবকদের অবশ্যই সন্তানের ব্যক্তিত্ব, প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। একেকটি পদ্ধতি একেক সন্তানের জন্য কাজ করতে পারে এবং সঠিক প্যারেন্টিং স্টাইল খুঁজে পেতে কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।

মিশ্র প্যারেন্টিং স্টাইল ব্যবহার করে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং সুস্থ পদ্ধতি তৈরি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, সন্তানকে স্বাধীনতা প্রদান করার পাশাপাশি তাদের জীবনের কিছু ক্ষেত্রে গাইডেন্স ও সমর্থন দেওয়া যেতে পারে।

সর্বোপরি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সন্তানের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের একটি সুখী ও সফল জীবনের পথে পরিচালিত করা। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের জন্য সর্বোত্তম সমর্থন প্রদান করা, যাতে তারা নিজেদের জীবনে উন্নতি করতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হতে পারে।

আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন এবং জানিয়ে দিন আপনি কোন প্যারেন্টিং স্টাইল অনুসরণ করেন এবং কীভাবে তা আপনার সন্তানের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। অভিভাবক হিসেবে আপনার মতামত ও অভিজ্ঞতা আমাদের কমিউনিটিতে মূল্যবান।

Related Articles

ক্লায়েন্ট এপ্রোচ থেকে ডিল ক্লোজিং: স্টেপ বাই স্টেপ গাইড

ক্লায়েন্ট এপ্রোচ করার সঠিক পদ্ধতি যেকোনো ব্যবসার সফলতার মূল চাবিকাঠি। একজন ক্লায়েন্টকে দক্ষভাবে এপ্রোচ করতে পারা মানে শুধুমাত্র একটি প্রজেক্ট জেতা নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী…

১০ উপায়ে অনলাইন থেকে ইনকাম করুন বাসায় বসেই

Covid-19 রোগের কারণে আমরা অনেকেই বর্তমানে বাসা থেকে অফিস করার এক্সপেরিয়েন্স পেয়েছি। এতে একদিকে যেমন প্রতিদিনের যানজট এড়ানো গিয়েছে তেমনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও আমাদের…

লিংকডইন ও সেলস ন্যাভিগেটর এর সিক্রেট টিপস!

নিজেকে প্রোফেশনাল এক্সপার্ট বা স্পেশালিষ্ট হিসাবে তুলে ধরার একটা চমৎকার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট হচ্ছে লিংকডইন। ক্যারিয়ারের ৪ স্টেজে লিংকডইনের ৪ টি সেগমেন্টে যদি ভালোভাবে ম্যানটেইন…

After Effects of COVID 19 on SME Business

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিশ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের থেকে বের হয়ে এই তাসদীখ হাবিব ভাই হয়ে উঠলেন একজন সমস্যা সমাধানকারী। যেন তেন সমস্যা নয়,…

মোশন গ্রাফিক্সে সফল ক্যারিয়ার গড়ার ১৫ টি টিপস

সম্ভবত ‘মোশন গ্রাফিক্স’ বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি সেক্টর যেখানে ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্টের পাশাপাশি বাংলাদেশও কাজের বড় ক্ষেত্র রয়েছে। কারণ ছোট বড় যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই প্রোমোশন করতে হয়।…

Responses

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. প্যারেন্টিং এর উপর সুন্দর একটা আর্টিকেল পড়লাম, ভালো লাগলো