ইন্টারভিউ বোর্ডে নিয়োগকর্তাকে যে ৬ টি প্রশ্ন করতে পারেন
জব ইন্টারভিউতে শুধুমাত্র নিয়োগকর্তারাই প্রশ্ন করবে বিষয়টা তা নয়। ক্যান্ডিডেড দেরও উচিত বেশ কিছু রিলিভেন্ট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা। এতে নিয়োগকর্তা ও ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রশ্নকর্তাদের ভিতরেও ক্যান্ডিডেড সম্পর্কে পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি হয়।
এই পজিশন থেকে আপনাদের এক্সপেক্টশন কী?
একই পজিশনে, একই রোলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান একজন এমপ্লয়ী থেকে ভিন্ন ভিন্ন রেজাল্ট এক্সপেক্ট করতে পারে। যেমন ধরুন, ‘ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ’ পজিশনের জন্য এমপ্লয়ী হায়ারিং এর ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান আশা করতে পারে যে রিক্রুটেড ক্যান্ডিডেড শুধুমাত্র ফেইসবুক, গুগলে পেইড এড ক্যাম্পেইন রান করবে, অপটিমাইজ করবে ও উইকলি রিপোর্ট সাবমিট করবে। আবার অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান সেইম পজিশনের জন্য চাইতে পারে যে রিক্রুটেড ক্যান্ডিডেড শুধুমাত্র অর্গানিক গ্রোথ নিয়ে কাজ করবে।
তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন ক্যান্ডিডেড এর ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রিক্রুটেড এমপ্লয়ী থেকে কি ধরণের রেজাল্ট আশা করছে, যা থেকে বুঝে নেওয়া যায় ‘উক্ত পজিশনের জন্য আমি রিয়েলি ক্যাপাবল কিনা?’ বা এমপ্লয়ারের রিক্রুক্রেটেড ক্যান্ডিডেড থেকে ওভার এক্সপেক্টেশন বা আন্ডার এক্সপেক্টেশন আছে কিনা। আর এই দুই ধরণের এক্সপেকটেশনই দিনশেষে ভালো কিছু নিয়ে আসে না।
টিপ: একটি ভালো প্রতিষ্ঠান জানে সে তার এমপ্লয়ী থেকে কি চায়। প্রতিষ্ঠিত যেকোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে উক্ত এমপ্লয়মেন্টের কাজের লিস্ট ধরে একটা প্রোপার জব ডেস্ক্রিপশন থাকবে।
কাজের KPI আছে কী? থাকলে কিভাবে ক্যালকুলেশন করা হবে?
প্রতিষ্ঠানে কাজ পরিমাপের যদি কোনো স্ট্যান্ডার্ড, সিস্টেম বা এভ্যুলুশান প্রসেস না থাকে তাহলে তা এমপ্লয়ী ও এমপ্লয়ার, দুইজনের জন্যই ক্ষতিকর। আর উক্ত পজিশনের জন্য KPI সেট করা আছে কিনা, তা জিজ্ঞাসার মাধ্যমে বিষয়টা জেনে নেওয়া যায়।
যদি প্রতিষ্ঠান উক্ত পজিশনের জন্য এখনো KPI সেট না করে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তারা এখনো ওয়াকিবহাল নেই যে আদৌ তারা কি চায়। যদি সেই ডিপার্টমেন্ট এর ম্যানেজার থেকে থাকে, বুঝতে হবে উনারও সম্যকভাবে ধারণা নেই, অর্গানাইজড না বা পজিশনটির ব্যাপারে সিরিয়াস না।
আর যদি KPI সেট করা থাকে তাহলে সব ডিটেইল ইন্টারভিউতে জেনে নেওয়ার সুযোগ না থাকলে, পরবর্তীতে মেইল করে দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন। KPI দেখে বুঝতে পারবেন কি করলে আপনার কাজের প্রোপার এভ্যুলেশন হতে পারে, যা প্রতিষ্ঠানে আপনার নেক্সট প্রোমোশন পেতে হেল্প করবে।
টিপ: KPI মানে হচ্ছে Key Performance Indicator, অর্থাৎ আপনার কাজের পারফর্মেন্স জাজমেন্ট করার কি-পয়েন্ট।
জয়েনিং এর পর অনবোর্ডিং ট্রেইনিং আছে কিনা? থাকলে তা কত দিনের জন্য, কিভাবে হবে?
একটি প্রতিষ্ঠান একটি পজিশনের পিছনে বেশ ভালো পরিমাণ ইনভেস্টমেন্ট করে থাকে। যার স্যালারি মাসে ১০ হাজার টাকা, তার পিছনেও বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ইনভেস্টমেন্ট চলে যায়। তাই একজন এমপ্লয়ী জবে জয়েনিং এর পর যত দ্রুত কাজে ফুল ফ্লেজে অনবোর্ড হতে পারবে, ততো দ্রুতই তার উপর প্রতিষ্ঠানের ROI (Return on Investment) উঠিয়ে আনতে পারবে।
আর ঠিক এ কারণেই ভালো প্রতিষ্ঠানে জব অনবোর্ডিং ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা থাকে। যেনো প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট, সার্ভিস, সলিউশন, ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজি, HR কালচার বুঝে দ্রুতই তার স্কিলসেট কাজে লাগাতে পারে।
টিপ: ইন্টারভিউ বোর্ডে এমপ্লয়ার নিজ থেকে ‘অনবোর্ডিং ট্রেইনিং’ এর ব্যাপারে কিছু না বললে এই প্রশ্নটি করা যেতে পারে।
এই পজিশনে আগে কেউ জব করেছে কিনা? তিনি কতদিন ছিলেন ও কেন জবটি ছেড়েছেন?
প্রশ্নটা আপনি সাবলীলভাবেই করতে পারেন। একজন এমপ্লয়ার যদি জিজ্ঞাসা করে কেন আপনি আগের বা কারেন্ট জবটি ছেড়েছেন, সেক্ষেত্রে আপনিও সাবলীলভাবেই প্রশ্নটি করতে পারেন। এতে ভনিতার কিছু নেই। আগের এমপ্লয়ীটি ঠিক যে কারণে স্যুইচ করেছে সেই কারণে তো আপনিও স্যুইচ করতে পারেন। এতে আপনার সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এমপ্লয়ারের পুরো রিক্রুটমেন্ট প্রসেস, অনবোর্ডিং প্রসেস নতুনভাবে আবার করতে হবে।
তাই ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত যে কেনো আগের এমপ্লয়ী সেইম পজিশনে জব ছেড়ে চলে গিয়েছে।
এমপ্লয়ী অফবোর্ডিং রুলস ও প্রসেস সম্পর্কে কোথায় জানতে পারবো?
ভালো প্রতিষ্ঠানে অনবোর্ডিং প্রসেস যেরকম থাকে সেরকম অফবোর্ডিং প্রসেস ও চেকলিস্ট থাকে। কতদিন আগে এমপ্লয়ারকে জানাতে হয়, দ্বায়িত্ব কিভাবে বুঝিয়ে দিতে হয়, প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া এসেট যেভাবে চেকলিস্ট ধরে ব্যাক করে দিতে হয় ও জব ছেড়ে যাওয়ার পর করণীয় বিষয়াদি।
সেক্ষেত্রে আপনি বিনয়ীভাবে বলতে পারেন, “এটা কি স্বাভাবিক না? পৃথিবীতে আসার পরই আমাদের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়, একটি ভালো বিল্ডিং এ সিড়ি/লিফট দিয়ে নামার পাশাপাশি ইমার্জেন্সী এক্সিটও থাকে। এটা জাস্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ইন্সিডেন্ট দ্রুত এড়ানোর জন্য রাখা হয়। আপনারা নিশ্চয়ই চাইবেন না আমি জয়েন করার পর এমন কিছু করে বসি যেটাতে আপনাদের রিপিউটেশন হ্যাম্পার্ড হয়, আর যদি হয়েই যায় সেক্ষেত্রে আমার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানে রিলেশনটা ক্লোজ করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই অফবোর্ডিং প্রসেস জানা থাকলে আমি সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত রেখে জয়েন করতে পারবো।”
টিপ: এটা মোটেও কঠিন বা এরোগ্যান্ট প্রশ্ন নয়। আপনাকে জাস্ট বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করতে হবে ও ডিসকাস করতে হবে।
উক্ত পজিশনের জন্য একজন ভালো, দক্ষ ক্যান্ডিডেড কেনো আপনাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করবে?
“আপনাকে কেনো আমরা হায়ার করবো” – এই প্রশ্নের বিপরীতে আপনিও উপরের প্রশ্নটি করতে পারেন। আর এই প্রশ্ন করার মানে এই না যে আপনি কাউন্টার এটাক করছেন, বরং আপনি উত্তর থেকে জেনে নিতে পারবেন প্রতিষ্ঠান স্যালারির বাহিরে উক্ত এমপ্লয়ীকে কি ধরণের বেনেফিট দিবে ও তাকে নিয়ে ফিউচারে কিভাবে চিন্তা করছে।
টিপ: ভালো ও দীর্ঘদিনের গোছানো প্রতিষ্ঠান এমপ্লয়ি বেনিফিটস নিয়ে বেশ ক্লিয়ার ধারণা রাখে।
উপরের প্রশ্নগুলোর সদুত্তর যদি কোনো এমপ্লয়ার থেকে না পান তাহলে ধরে নিতে পারেন প্রতিষ্ঠানটি নতুন বা নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। আর যদি পুরোনো ও দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে, তাহলে বুঝে নিতে পারেন এখানে ক্যারিয়ার গ্রোথ কম হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
আর নতুন প্রতিষ্ঠান হলে তা নিয়ে নেগেটিভলি না ভেবে চাইলে তাদেরকে হেল্প করার মাইন্ডসেটে জয়েন করে বড় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন।
“Before 30 years old, follow somebody. Go to a small company. Normally in a big company, it’s good to learn processing. You are part of a big machine. But when you go to a small company, you learn the passion. You learn the dreams. You learn how to do a lot of things at one time.”
– Jack Ma
Responses