নলেজ, স্কিল এবং এক্সপেরিয়েন্স – গ্রোথ জার্নি
নলেজ বা জ্ঞ্যান, স্কিল বা দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বা এক্সপেরিয়েন্স তিনটি বিষয় আমাদের প্রত্যেকের পার্সোনাল কিংবা প্রফেশনাল গ্রোথ এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এই তিনটি বিষয় খুব কাছাকাছি মনে হলেও প্রত্যেকটি বিষয় আলাদা গুরুত্ব বহন করে এবং এ বিষয়ে আমাদের ধারনা এবং উপলব্ধি আরও পরিষ্কার হলে একটি সফল ক্যারিয়ার গ্রোথ জার্নিতে নলেজ, স্কিল ও এক্সপেরিয়েন্স এর যথাযথ ব্যবহার করতে পারবো।
প্রথমে আসি জ্ঞ্যান কিংবা knowledge; মূলত হচ্ছে যেকোনো বিষয়ের থিওরি যার মাধ্যমে আমরা কোন কিছু সম্পর্কে কাগজে কলমে বুঝতে পারি বা আমাদের মধ্যে কোন একটা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ক্লিয়ার হয়। নলেজ একটা শেয়ারেবল বিষয়। জ্ঞ্যান কিংবা নলেজ আমাদের আশপাশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করে। আমাদের জীবন চলার ক্ষেত্রে বা যেকোনো বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে সে বিষয়ে নলেজ আমাদের হেল্প করে। আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও আমাদের বিভিন্ন বিষয়ের নলেজ থাকা খুব প্রয়োজন।
আপনি বিভিন্নভাবে নলেজ নিতে পারেন বা কোন কিছু সম্পর্কে শিখতে পারেন এবং বিষয়টা অন্যকে শেখাতে পারেন। নলেজ জিনিষটা শেয়ারেবল। নলেজ বা জ্ঞ্যান এর সঙ্গে সম্পর্কিত হচ্ছে শিক্ষক। সাধারণত শিক্ষকদের থেকেই আমরা নলেজ পাই বা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানি অথবা শিখি।
যেমন ধরেন ফুটবল কীভাবে খেলতে হয়, কিংবা একটা বাদ্যযন্ত্র কীভাবে বাজাতে হয় এই বিষয়টা কেউ আপনাকে বলে দিল বা আপনি কোথাও থেকে পড়ে, দেখে অথবা শুনে এই বিষয়ে জ্ঞ্যান নিতে পারেন।
অপরদিকে স্কিল বা দক্ষতা হচ্ছে যখন আমরা প্র্যাক্টিক্যালি কোন একটা নলেজের ব্যবহার করি। কোন একটা বিশেষ কাজ ভালোভাবে এবং সঠিকভাবে করতে পারার সক্ষমতাটাই হচ্ছে স্কিল। এটার সঙ্গে প্র্যাকটিস এবং কোন একটা বিষয় বারবার করার ব্যাপারটা সম্পর্কিত। একটা জিনিষ বার বার করতে করতে আমরা সেই বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠি কিংবা দক্ষতা অর্জন করি। তো সিম্পলি বলতে গেলে নলেজ যখন থিওরি থেকে আমরা প্র্যাকটিস এ নিয়ে আসি তখন আমাদের দক্ষতা অর্জন হয়। যেমন সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, কমিউনেকেশান এর দক্ষতা, লিডারশীপ বা নেতৃত্ব, বা ধরেন ফুটবল খেলতে পারার দক্ষতা।
দক্ষতা কিংবা স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য আমাদের যারা হেল্প করে তারা হচ্ছেন কোচ। তারা আমাদেরকে একটা জিনিষ বারবার করতে বার বার প্র্যাকটিস করতে বিভিন্ন টেকনিক ও টিপস দেয় এবং আমাদের অনুপ্রাণিত করে যেন আমরা কোন একটা বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠি।
সেই ফুটবল খেলা যার নিয়ম আমরা শিখেছিলাম কিংবা কোন একটা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর যেই ফর্মুলা বা নলেজ আমরা পেয়েছি যখন সেটা আমরা প্র্যাক্টিকালি প্র্যাকটিস করবো তখন আমরা দক্ষ হয়ে উঠবো। বার বার প্রতিদিন ফুটবল বা ওই বাদ্যযন্ত্র বাজাতে বাজাতে আমরা ওটার উপর যক্ষ হয়ে উঠবো।
এবার আসি এক্সপেরিয়েন্স বা অভিজ্ঞতায়।
দক্ষতা বা বার বার প্র্যাকটিস করেও কিন্তু আপনি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন না। দক্ষতা হচ্ছে প্র্যাক্টিক্যাল নলেজ বা হাতে কলমে কিছু জানা বা শেখা। আর অভিজ্ঞতা হচ্ছে যখন আমরা আমাদের নলেজ ও স্কিলকে বাস্তব জীবনের কোন কাজে লাগাই বা কোন একটা বিশেষ সিচুয়েশান কিংবা কনটেক্সটে যখন আমাদের স্কিল এবং নলেজ কাজ করে তখন সেটা হয় অভিজ্ঞতা। মানে অভিজ্ঞতা আমাদের হয় তখন যখন আমাদের স্কিল ও নলেজ কোন একটা রিয়েল লাইফ প্রবলেম বা সিচুয়েশনে ব্যবহার হয়। এর মাধ্যমে আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হই আমরা সফল বা বিফল হই আমাদের দক্ষতা কিংবা নলেজ চ্যালেঞ্জড হয় তখন আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করি। অভিজ্ঞতা আমাদের যেকোনো বিষয়ের জ্ঞ্যান ও দক্ষতা সম্পর্কে আরও গভীর ধারনা দেয় এবং আমাদের গ্রোথের জন্য অভিজ্ঞতা অনেক অনেক জরুরি ভূমিকা পালন করে।
আর অভিজ্ঞতা অর্জনে কিংবা অর্জনের পথে আমাদের হেল্প করতে পারেন মেন্টরস, যারা নিজেরা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বাস্তব জীবনে এবং তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা আমাদের দিক নির্দেশনা দিতে পারেন আমাদের ডেভেলপমেন্ট জার্নিতে।
আগের উদাহরণ থেকেই যদি অভিজ্ঞতার বিষয়টা পরিষ্কার করি, ধরুন আপনি অনেক ফুটবল প্র্যাকটিস করেছেন, এর খুটিনাটি সব নলেজ ও আপনার আছে। রেগুলার প্র্যাকটিস করেন, প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেন। কিন্তু যখন আপনি একটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবেন সেটা অনেক আলাদা, সেখানে আপনার মেন্টাল চাপ থাকবে, প্রতিপক্ষ কিংবা খেলার মাঠ হতে পারে আপনার অজানা সেসব ফ্যাক্টর থাকবে। অনেক কিছুর উপর ডিপেন্ড করবে আপনার যোয় পরাজয়। আর যত এরকম ম্যাচ খেলতে থাকবেন একজন ফুটবল প্লেয়ার তত সে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে বিভিন্ন সিচুয়েশান এবং রিয়েল লাইফ চ্যালেঞ্জ এর সঙ্গে। তেমনি একজন খুব স্কিল্ড ইন্সট্রুমেন্ট প্লেয়ার যখন নিজে প্র্যাকটিস করে আর যখন দর্শকের সামনে বা দর্শকের জন্য পারফর্ম করে তখন তার অভিজ্ঞতা তৈরি হয়, রিয়েল লাইফ সিচুয়েশানে তার স্কিল টেস্টেড হয়। এবং এভাবে পারফর্ম করতে করতে সে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
তো আমাদের জীবনে এগিয়ে যেতেও আমাদের এই স্টেপগুলো পার করে করে যেতে হবে। নলেজ বা জ্ঞ্যান থেকে প্র্যাক্টিকাল নলেজ এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর আমাদের দক্ষতাকে যখন আমরা বাস্তব জীবনের অনেক সমস্যা সমাধানে কিংবা সিচুয়েশানে পরীক্ষা করবো সেখান থেকে জয় পরাজয় এর প্রসেস এর মাধ্যমে আমরা কোন একটা পার্টিকুলার বিষয়ের প্রতি অভিজ্ঞ হয়ে উঠবো।
এই বিষয়গুলো আমাদের যেকোনো কিছু শেখার একটা প্রসেস। এভাবে উপলব্ধি করে যদি আমরা আমাদের লার্নিং জার্নি তৈরি করি, প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করি এবং ফাইনালি যখন আমাদের দক্ষতা বাস্তব জীবনে বিভিন্ন সিচুয়েশান এ এ্যাপ্লাই করে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করবো। এই বিষয়গুলো বুঝে আমরা আমাদের প্রফেশনাল এবং পার্সোনাল লাইফের গ্রোথ আমাদের পরিকল্পনা মাফিক করতে পারবো।
লার্নিং ইজ এ এভারগোয়িং জার্নি। কিপ লার্নিং।
আপনাদের মতামত বা অন্য কোন উপলব্ধি এই বিষয়গুলোর উপর থাকলে অবশ্যই কমেন্টে শেয়ার করবেন।
Responses