নিজেই যেভাবে বানাবেন মাল্টিভেন্ডর মার্কেটপ্লেস ওয়ার্ডপ্রেস ইকমার্স সাইট
বাংলাদেশে এই মূহুর্তে ৪ কোটির বেশী ফেইসবুকে ইউজার একাউন্ট আছে, যাদের মধ্যে ৪৪ লাখ বিজনেস পেইজ একাউন্ট ইউজার। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই যুগে অনলাইন বিজনেস শুরু করা অনেক সহজ। বাংলাদেশে মোবাইল ইউজারের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি, বিকাশ, নগদ, রকেট এর মতো মোবাইল ওয়ালেট একাউন্ট ইউজারের সংখ্যাও বাড়ছে। অন্যদিকে, ইভ্যালি, দারাজ সহ বড় বড় ইকমার্স মার্কেটপ্লেসের মেগা অফারগুলো মানুষকে অনলাইন শপিংয়ে আগ্রহী করে তুলেছে।
কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের কারণে অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে আগের চাইতে বহুগুণ। Small Medium Enterprise (SME) উদ্যোক্তারা নিজেদের F-Commerce বা eCommerce website এর স্বল্প বাজেটে ফেইসবুক বুস্টিং করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড করিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া এখন SslCommerz এর মতো পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস নিয়ে উদ্যোতারা নিজেদের ইকমার্স সাইটে সহজেই মাল্টিপল ব্যাংক, মোবাইল ওয়ালেট ও বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন যুক্ত করতে পারছে।
চোখ বন্ধ করে বলা যায় বাংলাদেশে অনলাইন বিজনেসের জন্য একটা মোক্ষম সময় যাচ্ছে। একটা অনলাইন বিজনেস সেটাপের জন্য যতধরণের বিল্ডিং ব্লক প্রয়োজন তার সব কিছুই আপনি হাতের নাগালে পাচ্ছেন।
এই ব্লগপোস্ট থেকে আমরা দেখবো কিভাবে কোনো প্রকার কোডিং নলেজ ছাড়া আমরা নিজেরাই সহজে মাল্টিভেন্ডর ওয়ার্ডপ্রেস ইকমার্স সাইট বানাতে পারি।
কী কী মার্কেটপ্লেস দেওয়ার অপশন এখনো বাংলাদেশে আছে?
- – মাল্টিভেন্ডর সার্ভিস মার্কেটপ্লেস
- – ক্লাসিফাইড এড মার্কেটপ্লেস
- – ডিরেক্টরি ও লিস্টিং মার্কেটপ্লেস
- – মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স মার্কেটপ্লেস
- – রিয়েল স্টেট মার্কেটপ্লেস
- – রেন্টাল মার্কেটপ্লেস
- – কনসাল্টেন্সি মার্কেটপ্লেস
- – ডিজিটাল প্রোডাক্ট মার্কেটপ্লেস
- – ইলার্নিং সলিউশন মার্কেটপ্লেস
মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স মার্কেটপ্লেস কী?
ইকমার্স সাইট সাধারণত ২ ধরণের হয়ে থাকে। সিঙ্গেল ভেন্ডর ইকমার্স সাইট ও মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স সাইট।
সিঙ্গেল ভেন্ডর সাইটে আপনি শুধুমাত্র নিজের বিজনেসের ইকমার্স প্রোডাক্ট আপলোড করতে পারবেন, যেমন DollBD.com। এই ধরণের সাইটে ভিজিটররা শুধুমাত্র আপনার অনলাইন প্রোডাক্টগুলো কিনতে পারবে, আর তাদের শুধুমাত্র কাস্টমার একাউন্ট তৌরি হবে।
আর মাল্টিভেন্ডর সাইটে অপশন রয়েছে অন্য যেকোনো SME উদ্যোক্তা আপনার ইকমার্স প্ল্যাটফর্মে ইউজার একাউন্ট ক্রিয়েট করে নিজের একটা স্টোর খুলতে পারবে। এখন যদি আপনার সাইট লিংক হয় GirlsQ.com, তাহলে নতুন ইউজার একাউন্ট খোলা উদ্যোক্তার স্টোর লিংক হবে GirlsQ.com/TanjinFashion. এই লিংকে কেউ ভিজিট করলে তখন এই স্টোরের প্রোডাক্টগুলো কিনতে পারবে যেকোনো ভিজিটর। আর প্রতিটি সাকসেসফুল অর্ডার কমপ্লিটে আপনি একটা লভ্যাংশ পেতে পারেন। আর এই লভ্যাংশ কত হবে সেটা আপনিই সেট করে ফেলতে পারবেন। আবার ধরেন কেউ যদি GirlsQ.com সাইটের হোমপেইজে যাবে তখন আপনার সেট করা প্রোডাক্টগুলো দেখতে পারবে ভিজিটররা। অর্থাৎ আপনার Multivendor Ecommerce site এ আপনার কাছেই থাকবে পুরো কন্ট্রোল।
মাল্টিভেন্ডর মার্কেটপ্লেস কত ধরণের হয়?
মাল্টিভেন্ডর মার্কেটপ্লেস যে শুধুমাত্র ইকমার্স সাইটই হবে বিষয়টি তা না। আপনি চাইলে আপনার আইডিয়া থেকে বিভিন্ন রকমের করতে পারেন।
যেমন আমি ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম বাংলা ভাষায় ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেস Kajkey.com সেটাপ করেছিলাম যেটা ছিল মাল্টিভেন্ডর মার্কেটপ্লেস। অর্থাৎ কেউ চাইলে ক্লায়েন্ট হিসাবে জয়েন করে ফ্রীল্যান্স কাজের পোস্ট করতে পারবে, আবার কেউ চাইলে ফ্রীল্যান্সার হিসাবে জয়েন করে পোস্টকৃত যেকোনো কাজে বিড করতে পারবে। এই Multivendor Freelance Marketplace আমি ওয়ার্ডপ্রেস থিমের মাধ্যমে সেটাপ করেছিলাম, যেখানে প্রথম ১ বছরে ৫০ হাজার+ ফ্রীল্যান্সার ও ১০ হাজার+ ক্লায়েন্ট জয়েন করেছিল।
WordPress eCommerce Marketplace Theme কী?
WordPress হচ্ছে Content Management System, যার মাধ্যমে আপনি ড্রাগ এন্ড ড্রপ করেই যেকোনো ওয়েবসাইট ডেভলপ করতে পারবেন। কোনো প্রকার কোডিং নলেজ ছাড়াই আমরা ওয়ার্ডপ্রেস সাইট বানাতে পারি। একবার WordPress আমরা হোস্টিং এ সেটাপ করে ফেলতে পারলে বিভিন্ন ধরণের থিম ও প্ল্যাগইন নামিয়ে লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়েসহ যেকোনো ধরনের সাইট বানিয়ে ফেলতে পারবো।
যাইহোক, চলুন দেখি এরকম ওয়ার্ডপ্রেস মাল্টিভেন্ডর মার্কেটপ্লেস থিম এর মাধ্যমে আর কত ধরণের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম বানানো যায়।
Multivendor Service Marketplace
আপনি যদি সার্ভিস রিলেটেড মার্কেটপ্লেস দিতে চান, যেখানে একপক্ষ সার্ভিস প্রোভাইডর হিসাবে ইউজার একাউন্ট খুলবে, আরেকদিকে অন্যরা সার্ভিস নেওয়ার জন্য কাস্টমার একাউন্ট খুলবে তাহলে চোখ বন্ধ করে Service Finder নামের এই Multipurpose WordPress থিমটি দিয়ে আপনার সার্ভিস মার্কেটপ্লেস প্ল্যাটফর্ম শুরু করতে পারেন।
Classified Ads Marketplace
বিক্রয় ডট কমের মতো যদি একটি ক্লাসিফাইড এডের মার্কেটপ্লেস দিতে চান, যেখানে কেউ চাইলে নিজের অব্যবহারিত পুরোনো যেকোনো মোবাইল ফোন, গ্যাজেট, ফার্নিচার সহ যেকোনো আটেটেম বিক্রি করার জন্য লিস্টিং করতে পারবে তাহলে আপনি AdForest – Classified Ads WordPress Theme এর মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি সহজে তৈরি করতে পারবেন।
Directory & Listing Marketplace
বাংলাদেশে এখনো ডিরেক্টরি বা লিস্টিং এর জন্য নামকরা কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। এই ধরণের মার্কেটপ্লেসে যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের বিজনেস ইনফরমেশন, লোকেশন লিস্টিং করে রাখতে পারবে। আপনি যদি এই ধরণের একটি প্লাটফর্ম বানাতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে MyListing – Directory & Listing WordPress Theme নামিয়ে ফেলতে পারেন।
Multivendor Ecommerce Marketplace
সিঙ্গেল ভেন্ডর, মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স ওয়েবসাইট নিয়ে আগেই বলেছি। এখন আপনি যদি মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স সাইট নিজেইন বানাতে চান, সেক্ষেত্রে বেশ কিছু চমৎকার থিম আছে।
REHub – Price Comparison, Multi-Vendor Marketplace, Affiliate Marketing, Community Theme
উপরের এই থিমটির রিভিউ রেটিং বেশ ভালো এবং এই থিমটি মাল্টি পারপাসে ইউজ করতে পারবেন। অর্থাৎ মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স মার্কেটপ্লেস বানানো ছাড়াও এফিলিয়েট ইকমার্স, প্রাইস কম্পারিজন সাইট বা কমিউনিটি বানাতে পারবেন।
Real Estate Marketplace
রিয়েলস্টেট মার্কেটপ্লেসে যেকেউ তাদের নিজেদের প্রোপার্টি বিক্রির জন্য লিস্টিং করতে পারবে। একটি মোস্ট পপুলার, ফাইভ স্টার রেটিং সহ ওয়ার্ডপ্রেস থিম হচ্ছে MyHome Real Estate WordPress। এই থিমটি দিয়ে আপনি রিয়েলস্টেট প্ল্যাটফর্ম বানাতে পারবেন।
Travel Agency Booking Marketplace
ট্রাভেল নিয়ে আসলে অনেক ধরণের মার্কেটপ্লেস হতে পারে। হোটেল বুকিং, Airbnb এর মতো প্লেসবুকিং, ট্যুর প্যাকেজ বা লোকেল গাইড – অনেকধরণের মার্কেটপ্লেস বানানো সম্ভব।
ট্যুর প্যাকেজ, হোম রেন্টাল এর জন্য Travel Booking WordPress Theme বেস্ট হবে, আর এই থিমটিও মাল্টিপারপাসে ইউজ করা সম্ভব। এছাড়া রেন্টাল সার্ভিস এর জন্য WP Rentals – Booking Accommodation WordPress Theme ও বেশ জনপ্রিয়।
হোটেল বুকিং এর জন্য Hotel Booking WordPress বা Soho Hotel Booking Calendar দেখতে পারেন।
Rental Marketplace
চিন্তা করে দেখুন এমন একটা মার্কেটপ্লেসের কথা যেখান থেকে আপনি প্রয়োজনীয় স্মার্টফোন, গ্যাজেট বা জামা-কাপড় আপনি ঘন্টা হিসাবে ভাড়া নিতে পারছেন। অবাক হবার কিছু নেই কিন্তু, আমরা অলরেডি গাড়ি যেরকম দিনের জন্য ভাড়া করছি বা ক্যামেরার লেন্স, ড্রোন ভাড়া নিচ্ছি তেমনি কিন্তু চাইলে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ভাড়া নিতে পারি, এবার এটা বিয়ের শেরওয়ানী-পাগড়ী হোক বা ব্রাইডাল ড্রেস।
এই ধরণের আইডিয়া মাথায় রেখে বেশ কিছু চমৎকার মাল্টিপারপাস রেন্টাল থিম আছে। আপনি WP Rentals – Booking Accommodation WordPress Theme এর ৭টি ড্যামো থেকে আপনার পছন্দের থিম নিয়ে রেন্টাল মার্কেটপ্লেস শুরু করতে পারেন।
গাড়ি বা অটোমোবাইল রেন্টাল মার্কেটপ্লেসের জন্য Motors – Car Dealer, Rental & Classifieds WordPress theme ইউজ করতে পারেন।
Consultancy Marketplace
বিজনেস, মার্কেটিং, HR, ফাইনেনশিয়াল, একাউন্টেন্ট বা ট্যাক্স এডভাইজর, স্ট্রাটেজি সহ নানা সেক্টর ও ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের নিয়ে আপনি চাইলে কনসাল্টেন্সি মার্কেটপ্লেস শুরু করতে পারেন। এই ধরণের প্ল্যটফর্মের জন্য বেস্ট দুইটা থিম হচ্ছে Consulting – Business, Finance WordPress Theme আর Service Finder
Digital Product Marketplace
আপনি যদি এমন একটি মার্কেটপ্লেস ডেভলপ করতে চান, যেখানে ইউজাররা তাদের ফটোগ্রাফ, ক্রিয়েটিভ ডিজাইন বা যেকোনো ডিজিটাল প্রোডাক্ট সেল করতে পারবে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি ডিজিটাল প্রোডাক্টের মার্কেটপ্লেস এর থিম দিয়ে শুরু করতে পারেন। ফটোগ্রাফ বা ইমেইজ সেল করার জন্য একটা চমৎকার থিম হচ্ছে Stocky – A Stock Photography Marketplace Theme। এছাড়া যেকোন ডিজিটাল প্রোডাক্ট সেলের মার্কেটপ্লেস থিম হিসাবে নিচের ৩টি থিম চেক করে দেখতে পারেন।
Cartzilla – Digital Marketplace & Grocery Store WordPress Theme
Tmexco – Digital Marketplace WooCommerce Theme
ThemePlace – Marketplace WordPress Theme
উপরের ৩টি থিমই ডিজিটাল প্রোডাক্ট সেল করার জন্য চমৎকার সব অপশন রেখেছে।
কীভাবে নিজে নিজেই ওয়ার্ডপ্রেস ইকমার্স সাইট বানাতে পারি?
লার্নিং বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্ম থেকে আমরা চমৎকার দুইটি কোর্স লঞ্চ করেছি WordPress Ecommerce ও ৩ দিনের অনলাইন বিজনেস সেটাপ এর উপর মেগা ওয়ার্কশপ। আপনি চাইলে নিচের কোর্সগুলোর পেইজ ভিজিট করে আরো ডিটেইলে জানতে পারবেন এবং সাবস্ক্রাইব করে ফেলতে পারেন।
কোর্সটি করার পর আপনি যেসকল বিষয় সম্পর্কে জেনে দক্ষ হয়ে উঠবেন:
- – ডোমেইন ও হোস্টিং সেটাপ
- – কেন ওয়ার্ডপ্রেস এর WooCommerce?
- – ইকমার্স এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস সাইট সেটাপ
- – WooCommerce ইন্সটল
- – স্টোর সেটিং
- – ছবিসহ প্রোডাক্ট কিভাবে আপ করবেন
- – স্টোর কাস্টমাইজেশন
- – কার্ট ও চেকআউট পেইজ এক্সপেরিয়েন্স কাস্টমাইজেশন
- – শিপিং সেটাপ
- – পেমেন্ট অপশন কনফিগারেশন
- – ট্যাক্স সেটাপ
- – গুগল এনালিটিক্স ও ফেইসবুক পিক্সেল সেটাপ
- – অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ও রিপোর্টিং